Sunday, March 03, 2013

মহল্লায় মেগা-মোল্লাহ


মাকসুদুল হক 

২৬ মার্চ ২০১২ - লিরা আগের দিন যুক্ত রাজ্যের Newcastle থেকে ফিরেছে | খুব ক্লান্ত এবং jet lag ছাড়া ৭ ঘন্টার সময় এর ব্যবধানের সাথে অভ্যস্ত হয়ে উঠে নাই | ঘুমাতে গেছে অনেক রাতে | ভোর ৭ টার নাগাদ ওর ঘুম ভাঙলো

'কি হচ্ছে বাহিরে? কে এতো চিত্কার করছে?' 

চোখ মুড়াতে মুড়াতে গেলাম জানালার কাছে - দেখি পাশের চা-সিগারেট এর দোকানের সামনে কালো ঝুব্বা পরিহীত এক হুজুর মোল্লাহ কি জানি বয়ানকরছেন | এতো তীব্র ও  কর্কশ তার কন্ঠ যে আমি আমার ৬ তলার এপার্টমেন্ট থেকেও স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি, তবে ঘুমের ঘোর যেহেতু আমার কাটেনি, কিছুই অনুধাবন করতে পারছিলাম  না হঠাট দেখি কিছু মহিলা আতঙ্কে মাথা নিচ করে দ্রুত গতিতে ছুটছে | অনেকেই মাথায় কাপড় শক্ত করে বাধছে | অধিকঅংশ গার্মেন্টস এর শ্রমিক, বা morning walk থেকে ফিরছে এমন সব মহিলা | উনারা সচরাচর মাথায় ঘোমটা বা অর্না দিয়েই হাটে|

এরপর বেশ কয়েকবার চললো খিস্তি:'ওই বেপর্দা মেয়ে মানুষ - মাথায় কাপড় দে...আল্লাহর গজব তোদের উপরে নামবে| সকালে নামাজ পরা হইসে? তোদের জামাই কই ? সাথে নাই কেনো? কার সাথে দেখা করতে গেসিলি এই সুবাহ সাদিকে (ভোর সকালে)?'

অনুভব করছিলাম আমার মাথা গরম হচ্ছে | খোজ নেবার চেষ্টা করলাম বিষয়টা  কি? Intercom এ এপার্টমেন্ট এর গার্ড কে বললাম কি হচ্ছে তা জানাতে | হুজুর মোল্লাহ অনলবর্ষি - কি সব বলেই যাচ্ছে | আধা ঘন্টার পর খবর পেলাম, সে আমাদের মহল্লার কোনো মোল্লাহ না - তাকে কেউ আগে দেখেনি | তবে থামাথামি নেই - এবং এর  ভেতরে লিরা'র ঘুম ভাঙলো | আমার পাশে দাড়িয়ে দেখি ও নিজে বোঝার চেষ্টা করছে |

বললো..'কি হচ্ছে এসব?

'আমি গার্ড কে দিয়ে খবর লাগ্গাছি - তুমি প্লিজ একটু ইজি  হও'

'এসব কারণেই  দেশে ফিরতে চাইনি| মোল্লাদের  দৃষ্টতা দেখে আমি সত্তি খুব  অবাক হচ্ছি | একটা কি মানুষ নেই এই মহল্লায়   তাদের কিছু বলার? আর তুমি…...তুমি কি করছো?  এতোক্ষণ  চুপচাপ বসে শুধু 'খবর লাগাচ্ছো ?'

লিরা'র বিরক্তি দেখে একেবারে চুপসে গেলাম  এবং  খুবই বিব্রত বোধ করলাম | সাথে সাথে তৈরী হলাম নিচে যাবার জন্য | নেমে যখন গেটের বাহিরে পা ফেললাম, দেখি ২/৪ জন বারটি হুজুর মোল্লাহ তাকে সাথে করে চলে যাচ্ছে

গার্ড জানালো 'সার.....সম্ভবত মাথায় গন্ডগোল আছে' 

ভাবলাম, হতেও পারে আবার নাও হতে পারে  - একটা benefit of doubt দিয়ে সব কিছুই ভুলে গেলাম | হয়তোবা  এটা একটা isolated incident,  তবে আমার ধারণা দেড়িতে হলেও ভুল প্রমানিত হলো |

১৬ই ডিসেম্বর ২০১২ : সকাল ১০টার  নাগাদ পত্রিকা পরছি | আবার সেই কর্কশ, সেই অতি পরিচিত কন্ঠ, পার্থক্য শুধু একটাই - শব্দের তীব্রতা অন্তত দশগুন  বেশি| এর কারণ, এ যাত্রা হুজুর মোল্লাহ হাতে একটা আধুনিক চোঙ্গা’, অর্থাত মেগাফোনে নিয়ে উনার 'বয়ান' ফরমাইতেসেন |

'থাকবো না ধিনক নাতিনতিন, মাদ্রাসাতে পরবো এবার আলিফ, লাম আর মিম | কবরের আজাব  হে মুসলমানগণ  আপনারা  তা কি জানেন ? এসব ইহুদি, খ্রীষ্টান, নাসারা, হিন্দুদের কথায় আপনারা চলছেন,  গান বাদ্য বাজাছেন সারা রাত, নাচানাচি করছেন, বেপর্দা  চলাফেরা করছেন, আপনাদের ছেলে মেয়েদের মাদ্রাসায় পাঠাচ্ছেন না | দেখেন আপনাদের ছেলেমেয়েদের কি অবস্থা? বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড করছে, দিন দুপুরে প্রকাশ্যে জেনা করছে, এসব কি ইসলামের শিক্ষা, এসব কি আমাদের ঈমানের শিক্ষা? আজ একটা সরকার দেশটাকে ভারতের কাছে, হিন্দুদের কাছে বিক্রি করে দিলো, এটা যে আল্লাহ'র প্রেরিত আমাদের উপরে শাস্তি, একটা গজব, এর থেকে কি আপনারা মুক্তি পেতে চান না’  

এর মধ্যে রাস্তায়  কিছু মহিলাদের আনাগোনা  চলছে - এবং আবার সেই পুরানো খিস্তি ...'ওই বেপর্দা মহিলা, তোদের শরম নাই? এক্ষুনি পর্দা কর, বাসায় এক্ষুনি ফিরে যা' ইত্যাদি ইত্যাদি, ইত্যাদি…...কিছু 'ইত্যাদি' এত নিম্নমানের ও অশ্লীল  যা এখানে আমার পক্ষে  বর্ণনা করা সম্ভব না |

নিজেকে অতি  কষ্টে সংযত করলাম এবং লিরা কে কিছু না বলেই চলে গেলাম চা-সিগারেট এর দোকানে | দেখি মোল্লাহ'র কেও তাকাচ্ছে না যদিও  মেগাফোন আকাশ এর দিকে তাক করা | কাছাকাছি গিয়ে ঠিক রাস্তার অপর  প্রান্তে আরেক চা দোকানে বসে এক শলা সিগারেট ধরিয়ে ভালো  ভাবে এই 'জিনিসটা  কি' ..তা বোঝার চেষ্টা করলাম

২৫-৩০ বছর বয়েসের এই হুজুর মোল্লাহ, ছিপছিপে গরন, গায়ের রং ফর্সা, আজ তার get up একটু পার্থক্য দেখলাম | গলা হতে পা অব্দি কালো ঝুব্বা, মুখে দাড়ি তবে মাথায় তুপি না, আজ পরেছে আরবদের কাফ্ফিয়া | দেখতে বিলকুল  আল-কায়দা নেতা  আয়মান আল জাউহারি'র মতো | আমাকে দেখে মহল্লাহ'র কিছু ভক্তের মিচকি হাসি ! একজন মুরব্বিকেও  দেখলাম, বসে চা পান করছেন | বললো...'মাকসুদ এসব কি হচ্ছে বলো তো?'  

হুজুর মোল্লাহ মেগাফোনে চেচিয়েই যাচ্ছেন | সিগারেট শেষ করে, গলা পরিষ্কার করে..অত্যন্ত মধুর কন্ঠে বললাম

'ও হুজুর আসেন আসেন, অনেক ইসলাম এর খেদমত করসেন | একটু বিশ্রাম নেনে..পানি খান, চা খান'

মেগাফোন বন্ধ করে চলে এসে আমার পাশের বেঞ্চ এ বসলেন | কনকনে  শীতের সকাল, তথাপি  খেয়াল করলাম  হুজুরের সাড়া  শরীরে ঘাম | হুজুর  প্রথমে পানি খেলেন - তারপর বললেন-  'এক কাপ রং চা দেন '  

দোকানদার রফিক কে বললাম, 'হুজুরের জন্য ফার্স্ট ক্লাস করে এক কাপ রং চা দে, সাথে এক পিস কেক ' 

মিনিট দশেকের ধরে হুজুর চা তে কেক ডুবিয়ে খাচ্ছেন - আর মহল্লা'র কিছু ছেলে আশপাশে দাড়িয়ে আমাকে চোখের ইশারায় কি জানি বলা চেষ্টা করছে | এক ছেলে কে কাছে ডাকতেই কানেকানে বললো - 'বস - একটু ভালো মতি সাইজ  করেন এই বেয়াদব তাকে'  

আমি চুপ থাকলাম 

তারপর শুরু করলাম..'হুজুর গোস্তাকি যদি না নেন, কিছু কথা বলতে চাই, আপনার পরামর্শ নিতে চাইহাসিমুখে জবাব…. 'ইনশাল্লাহ চেষ্টা করবো, বলেন কি বলতে চান''না হুজুর কিছু বলার নাই, তবে এই যে যন্ত্রটা (মেগাফোন এর দিকে ইশারা করে) এটা তো যাদের কে একটু আগে ভালো গালিগালাজ করলেন ইহুদি, খ্রীষ্টান, নাসারাদের আবিষ্কার - আচ্ছা বলেন দেখি ১৫০০ বছর আগে আমাদের রাসুলুল্লাহ ইসলাম প্রচার করার জন্য এটা কি ব্যবহার করতেন?''

'না'

'তো আপনি যে এটা করছেন, তাহলে কি আমি বলতে পারি যে আপনার চির শত্রুদের যন্ত্র দিয়েই এটা আপনি মুসলমানদের কে আবার মুসলমান বানানোর চেষ্টা করছেন?'  

'অসুবিধা তো নাই, ইসলামের কাজে ইহুদিদের যন্ত্র ব্যবহার করাতো না-জায়েজ কিছু না

'ও অচ্ছা, ভালো কথা, তাহলে ইহুদিদের যন্ত্র দিয়ে যে আপনি মুসলমানদের কে আবার মুসলমান বানানোর কৌশিশ করছেন, আপনি বলেন দেখি, আমার ধারণা কি সত্য যে ধর্মীয় বিধান আছে আপনি কারো সাথে ধর্ম নিয়ে জবরদস্তি করতে পারবেন না, কাউকে তকলিফ দিয়ে ইসলাম প্রচার করতে পারেন না?'

মনে হলো একটু মেজাজ খারাপ হয়েছে এই প্রশ্ন শুনে

তকলিফ, কার তকলিফ আমি করলাম? আজকাল ইসলামের কথা শুনাইতে গেলে সবার তকলিফ হয়, কিন্তু ইহুদি, খ্রীষ্টান, নাসারা হিন্দুরা কিছু বললে, এসব নাম মাত্র মুসলমানদের ..তকলিফ হয় না

'ও এই মহল্লায় আমরা নাম মাত্র মুসলমান' আর আপনি 'কাম মাত্র মুসলমান' - এটাই কি আপনার ধারণা?'  

হুজুর মোল্লাহ জোরশোর 'হা, হা' বলে মাথা নাড়লেন  

'আচ্ছা আপনি দাড়ি রাখসেন, তুপি,ঝুব্বা পড়সেন আর কিসু বোকুয়াস বুলি 'ইসলাম' বলে ঠাউরাতেসেন | আপনার কাছে এমন কি প্রমান আছে, আপনি আমার চেয়ে অনেক বড় মুসলমান? মুসলমানের  এই সার্টিফিকেট আপনাকে কে দিলো ?'

নিরুত্তর হয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলেন - এরপর গম্ভীর স্বরে আমাকে জিগ্গেস করলেন -

'আমি আপনাদের জবরদস্তি করলাম, তকলিফ করলাম কি করে? আমিতো দ্বীনের দাউয়াত নিয়ে এসেছি'

'আপনি এই বিল্ডিংএর সামনে দাড়িয়ে মেগাফোন নিয়ে চেছাছেন, আপনি কি একবার চিন্তা করেছেন এই বিল্ডিংএ, এই মহল্লায় শতশত নারী পুরুষ আছে যারা বিরক্ত হচ্ছে আপনার কথায়, এখানে বৃদ্ধ লোক আছে, অসুস্থ লোক আছে, আছে ছোটো ছোটো বাচ্চা যারা আপনার কর্কশ চিত্কার শুনে ভয়ে কাপছে? আপনি কোরান, হদিস নিয়ে আলাপ করতে চান, ভালো কথা, এইতো আপনার ২০ গজের ভেতরেই আমাদের জামে  মসজিদ, সেখানে আসেন না কেন? এই রাস্তার উপরে দাড়িয়ে মহিলাদের উত্তক্ত করছেন এটা কোন ধরনের কথা?'

'বেপর্দা মহিলাদের আমি পর্দা করতে বলছি, এটা উত্তক্ত করা কিভাবে হলো?'

'অব্যশই আপনি উত্তক্ত করছেন, এই মহল্লায় আমরা তো উনাদের আমাদের মা, বোন্ বা নিকট আত্তীয় ছাড়া অন্য চোখে দেখি না| আপনি তো আপনার চোখ দিয়ে উনাদের ধর্ষণ করছেন, অশ্লীল খিস্তি দিচ্ছেন

…….এরপর আমার অতিউচ্চতম রক কন্ঠে চিত্কার করলাম...'আপনার চোখের, আপনার জবানের পর্দা কই বদমাইশ?'

উত্তরে বললেন 'এটা আমার ভুল হয়েছে - আমি বুঝতে পড়িনি'

আপনি এত বড় মাপের আলেম, আপনি আল্লাহ'র পয়গাম নিয়ে আসছেন, অথচ আপনার এইটুকু সাদারণ জ্ঞান নেই, এইটুকু সৌজন্যবোধ নেই? আর দ্বীনের দাউয়াত? সেতো আপনি দেবেন ভিন্ন ধর্মের মানুষের কাছে, আপনি কি মনে করছেন এই মহল্লায় আমরা সবাই অ-মুসলিম?' 

এবার হুজুর একটু থমকে গেলেন...আর মুহুর্তের মধ্যে সুর পাল্টিয়ে কান্না কান্না স্বরে (আরবি স্টাইল এ ) বললেন ..

'ভাই রে ভাই, কিন্তু কবরের আজাব যে কত ভয়াবহ'

'কবরের আজাব আপনি কি দেখেছেন?'

'অব্যশই দেখেছি'

'ও তার মানে আপনি কবরের আজাব দেখে ভয় পাইসেন, আর ভয় পাইসেন বিধায় আমাদের সবাই কে মরণের ভয় দেখাচ্ছেন? মরণ তো হবেই - হায়াত, মৌত আর রিজিক তো আল্লাহ'র হাতে |মরণের ভয় তো আল্লাহ দেইনা..দেই শয়তান..দেখা যাচ্ছে আপনি ইসলাম ও না, আল্লাহ ও না…..আপনিতো শয়তান এর খাদেম!'

'নাউজুবিল্লাহ….…ছি..ছিছি.....নারে ভাই আপনি আমারে ভুল বুঝতেসেন'

আশপাশের সবার উদেশ্যে প্রশ্ন রাখলাম….. 'আচ্ছাএখানে কি সবাই মুসলমান?'

এক স্বরে সবার উত্তর..'জী মাকসুদ ভাই'

'মুসলমানের ঘরে যার জন্ম, সে কি মরণের ভয় করে?' 

এক স্বরে সবার উত্তর..'না

হুজুরে এবার প্রায় খামোশ | মনে হলো একটু ভয় এ কাপন শুরু হয়েছে - তরপরেও সে নাছোর বান্দা |

'কিন্তু সাড়া রাত যে বাউল গানের অনুষ্ঠান হয় - তখন তো কেউ কিছু বলে না'

'অব্যশই হয়, আমি নিজেও বাউল গানের শিল্পী'

কথা শুনে  হুজুরের ভ্রু কপালে উঠে গেলো!

'আপনি কি জানেন সারারাত গান করতে হলে, মাইক ব্যবহার করার জন্য পুলিশের অনুমতি লাগে ?' 

'আল্লাহ'র কাজ করি, ওসব অনুমতির পঅরুয়া করিনা'

'ও তাই? আপনি কি জানেন আপনি যে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করছেন ঘন্টার পর ঘন্টা , তার জন্য আমি পুলিশকে খবর দিলে আপনাকে এই মুহুর্তে গ্রেফতার করা হবে?' 

এবার হুজুর সত্যি ঘাবড়ে গেলো....তারাহুরা শুরু করলো উঠার জন্য | আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো

'ঠিক আছে আমি এখন চলে যাচ্ছি, তবে আমার মেগাফোন হাতে সাড়া প্রথিবী আমার কাছে খোলা আছে/ আমি ঠিক এভাবেই আমার কাজ করে যাবো'

'খুব ভালো কথা হুজুর, কিন্তু সাড়া প্রথিবী যেখানে খুশি যান, কিন্তু মনে রাখবেন এই মহল্লায় আবার যদি ফেরত আসেন আপনার অসুবিধা হবে অনেক বেশি

চ্যালেঞ্জ স্বরে - 'কি ধরনের অসুবিধা? আপনি কি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন ?' 

জি আমি হুমকি দিচ্ছি আল্লাহ সয়ং এই মহল্লায় থাকেন'

হুহ হুহ জাতীয় কিছু শব্দ করে হুজুরের পলায়ন |

৩১ ডিসেম্বর ২০১২ - বাড়িতে ফিরতে একটু দেরী হলো, এবং আমি রাতের খাবার বিষন্ন হয়েই রাধছি | গত ২টা থার্ট ফার্স্ট রাত কেটেছে লিরা ও আমার বন্ধুদের সাথে | এ বছর মিহিকা আসাতে জীবনের অনেক কিছুই পাল্টে গেছে | ওকে নিয়ে লিরা ব্যস্ত ও আমি রান্না করছি

 আমার বিল্ডিং এর  দেয়াল ঘেষা একটা নাচের স্কুল | দেখি রাত ৮ টা থেকে সেখানে চলছে হুলুস্থুল কান্ড | স্কুলের ছোটো  ছোটো মেয়েরা 'রূপবানে  নাচে কোমোর দুলাইয়া' সহ বহু 'অত্যাধুনিক' গানের সুরে, নতুন সব মুদ্রায় নৃত্য করছে | বাচ্চাদের খিল খিল হাসি, অবিহ্বাববকদের  তালি, এবং  কেক কাটা, বেলুন ফলানো দেখে খুবই ভালো লাগছিল |

লিরা এসে মাঝে মাঝে উকি দিয়ে যাচ্ছে | দুচারটা নববর্ষের শুভেচ্ছা  টেলিফোন, ও এসএমএস নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম….হঠাত ..সেই একই হুজুর মোল্লাহ | ওই একই কথা বার্তা - তবে এবার তার main target টা বোঝা গেলো | মেয়দের নাচের স্কুল ! চল্লো সেই একই ধঙ্গে অবিরাম খিস্তি - সাথে একটা নতুন সংযোজন :

'কেউ পারবে না তোমাদের বাচাতে আল্লাহ'র গজব থেকে | তোমাদের বাবা, মা, পারবে না, পারবে না তোমাদেরশিক্ষিকা..পারবে না মহল্লা'র কোনো বাউল শিল্পী তোমাদের বাচাতে | থার্টি ফার্স্ট করছো? কেন বছরের শেষ দিনে আল্লাহ'র কালাম পাঠ করছো না ? কেনো শয়তান এর গোলামী করছো' ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি ..

এবারের ইত্যাদিগুলো এতটাই জঘন্য যে  মনে করতেও আমার ঘেন্না করছে |

লিরা এবার আমার উপরে মহা খেপে গেলো | কোমরে হাত রেখে বললো.... 

'শোনো - গতবার তোমার ওই মা'আরেফতি/ফকিরি ইসলাম দিয়ে ওই বদমাইশ তাকে শায়স্তা করতে পারলা না | এবার যাও.. গিয়ে একটা ভালো মতো লাঠি পেটায় করো..এক্ষুনি যাও'

কি করবো ভাবছি | বাসায় ভালো একটা লাঠিও রাখি না কারণ মারধর করা  শিক্ষা আমার গুরু আমায় দেইনি |

আধ  ঘন্টা বিভিন্ন কিছু ভাবছিলাম কি করে এই সমস্যা সমাধান হবে | একটা অদ্ভূত এবং অসম্ভব চিন্তা মাথায় আসলো| লিরা'র সাথে share করলাম...

'আচ্ছা পুলিশকে খবর দিলে কেমন হয়?’

'দিয়ে দেখো - কোনো কাজ হবে বলে মনে হয় না'

থানাতে দুচার বার ফোন দেবার পড়, একজন ধরলো | খুবই অবাক কান্ড..পুলিশের ভদ্রমহিলা দ্রুত আমাকে টহল পুলিশের একজন কর্মকর্তার নাম ও নম্বর দিলো | ফোন করার ২ মিনিট'র ভেতর পুলিশ এসে হাজির....এবং সব চেয়ে আশ্চর্যের কথা...'হুজুর মোল্লাহ' গ্রফতার হলেন....এবার সবাই  সবাই বলেন...আলহামদুল্লিলাহ!

১০ জানুয়ারী ২০১৩ : কি এক কাজে গিয়েছিলাম মতিঝিল অফিস পাড়ায় | ২৪ তলার বিল্ডিং থেকে নামছি একা | ২টা ফ্লোর পার হবার পড় লিফট'এ উঠলেন এক ভোয়াবহ মার্কা হুজুর মোল্লাহ| আমাকে আপাদমস্তক দুই তিনবার দেখলেন| মাথায় গামছা, গলায় বৌদ্ধদেবের অলংকার, টি শার্ট, হাতে বালা, জিন্স, স্নিকার্স আবার চোখে কালো সান গ্লাস | কোনো ভাবেই হিসাব মিলাতে পারছেন না | এদিকে উনার দেহ থেকে ভেসে আসছে অত্যন্ত তীব্র আতরের খুশবু, যা রীতিমত আমার মাথা বেথা শুরু করার লক্ষণ |কিরকম জানি একটা শব্দ করলেন, তারপর একটু তিক্ততার সাথে প্রশ্ন -

'আপনে কি হিন্দু?’

উত্তর দিলাম -'না হুজুর, আমি ইহুদি!

হুজুর ঠিক পরের তলায় তারাতারি নেবে পড়লেন :)

ঢাকা ৩.৩. ২০১৩

0 Comments:

Post a Comment

<< Home