আজকের ভাবনা - ৪ঠা চৈত্র - বঙ্গাব্দ ১৪১৯ : কি হতে চলেছে বাংলাদেশে?
মাকসুদুল হক ম্যাক
১. লড়াই এ আমরা নেমেছি, বলেছি এটা অহিংস আন্দোলন, এবং এই অব্দি শত্রু পক্ষের সাথে আমাদের কন্ঠের জোর খাটিয়েছি, এবং কড়া কথা ছাড়া কোনরকম দাঙ্গা/ফেসাদে এ লিপ্ত হইনি | আমরা বোকার মত ভেবেছি, কিছু স্লোগান, কিছু ধমক, কিছু বাধ্যহীন বেসুরা গান, কিছু গদোগদ ভাষার কবিতা দিয়েই শত্রুকে ঘায়েল করবো | ব্যক্তিগত ভাবে আমি যখন ১৮ই ফেব্রুয়ারীতে বিটিভির সরাসরি সম্প্রচার কল্যানে শাহবাগ থেকে আহবান করলাম ~~~ “এপাড়া বা ওপাড়া বলে কোনো কথা নেই - সমগ্র বাংলাদেশের পাড়া আমাদের পাড়া, চলুন আমরা মগবাজার রেইল ক্রসিং, দৈনিক বাংলা মোড়, চট্ট্রগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সহ শত্রুর তথাকথিত ‘সুরক্ষিত দুর্গ/ঘাটি’ গুলো দখল করি| শত্রুর বুকের উপরে থাবা না মারলে, ওদের প্রতিহত করা যাবে না " ~~~~ কারো কাছ থেকে কোনো ধরনের সারা মেলেনি |
২. আমরা কেউ একবারও ভাবিনি ২০১৩ মুক্তিযুদ্ধে শত্রু "নদীর ওপারে" কেবল না, আমাদের ভেতরেও বিচরণ করছে - নির্দিধায়, নিরংকুশ চিত্তে, অনেকেই মুক্তিযোদ্ধার লেবাস পরে রাজাকারী করছে | করবে না কেনো? আমরা তো কেবল ১০ জন রাজাকারের ফাসি দাবি করেছি | বাকি হাজার, হাজার রাজাকাররা কি ইতিমধ্যে পাকিস্তানে পলায়ন করেছে? ঘাপলা আরো বাধিয়েছি | আমরা মূল দাবি 'ফাসি চাই' থেকে অনেক দূর সরে গিয়ে, আরো নতুন, নতুন দাবি সংযোজন করেছি - অর্থাৎ রনাঙ্গনের ভাষায় যাকে বলা হয় "অধিক front open" করেছি, যার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ লড়াই করার রসদ, লোকবল, ক্ষমতা, কৌশল বা বুদ্ধি কোনকিছুই আমাদের বিন্দু মাত্র নেই | এছাড়া একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বাস করলেও আমাদেরকে যারা বস্থুনিষ্ঠ সমালোচনা করেছে, করে বা করবে, তাদেরকে ঢালাও ভাবে "রাজাকার, পাকিস্তানের দোসর" বলে গালিগালাজ করেছি ও করবো | খুব ভালো কথা - তবে শত্রু কি করছে এবং কি করতে যাচ্ছে তার কি কোনো আগাম আভাস আমরা পাচ্ছি?
৩. শত্রুপক্ষ বললো তারা "গৃহ যুদ্ধ" বাধিয়ে দেবে, 'রক্তের বন্যায়' বাংলাদেশকে ভাষিয়ে দেবে - তা তারা করতে আংশিক সফল হয়েছে | এ ছাড়া তারা ৩টা মূল দাবি নিয়েই এগুচ্ছে - ক) আমরা নাস্তিক খ ) আমরা রসুলাল্লাহ্কে অবমাননা করেছি গ ) আমরা পবিত্র কোরানকে অবমাননা করেছি:
সমস্যা হচ্ছে, নাস্তিকতা আমাদের হাতেগোনা কতিপয় ফ্যাশনেবল "প্রগতিশীল ব্লগার" কমরেডদের একধরনের অভিজাত পিকনিক! আমরা গুটিকয়েক কমরেডদের জন্য অবাল, বৃদ্ধ, বনিতা - মুসলিম, অমুসলিম সবাই নাস্তিকের খাতায় নিজেদের নাম লিখিয়েছি | 'Damage Control' করতে রাতারাতি হাস্যকর কিছু কৌশলও অবলম্বন করেছি | যেমন কিছু ওয়াহাবী/শরীয়তি আলেম, উলেমা, মাশায়েখদের পাক্রাও করে আমাদের দলে ভিরিয়েছি - ভেবেছি "বাহ.. এখন তো হুজররা আমাগো লগে আসে - দেখি কেমনে ঠেকায়" | রাতারাতি আমরা কতটা 'সাচ্চা মুসলিম' আর কতটা 'হালাল বিশ্বাসী' - সেই ইমান প্রমানের ব্যর্থ কৌশিশ এ লিপ্ত হয়েছি | যা এতদিন হয়নি - তাই হলো | “সকল ধর্মগ্রন্থ” শাহবাগসহ অন্যান্য গণজাগরণ মঞ্চের অনুষ্ঠানের আগে পাঠ করার এক হিরিক শুরু হয়ে গেলো | শত্রু পক্ষ ভালই বুঝতে পারলো কতটা তারা আমাদের 'ঘবরাতে' সক্ষম হয়েছে |
৪. রসূলাল্লাহ সম্পর্কে কটুক্তি বা কোরান নিয়ে কুত্শা ব্লগ এ নতুন কিছুই না | হাতে গোনা কিছু বাংলা ব্লগ বন্ধ ঘোষণা করলেই এর শেষ হবে তা ধারণা করা বোকামি | কয়েক লক্ষ্য এধরনের ব্লগ ও ওয়েবসাইট আছে বিশ্বের অনেক ভাষায় - এমনকি আরবিতেও | তবে "ব্লগার" শব্দটা রাষ্ট্র ও শত্রুপক্ষ এমন ভাবে বলা শুরু করলো, তাতে মনে হলো, যে না জানি এটা কতো সাংঘাতিক এক “Rocket Science” | মনে হলো চন্ডালের বাংলাদেশে এক ধরনের "নব্য ব্রাহ্মন" শ্রেনীর আবির্ভাব ঘটেছে ! বস্তুত যে কোনো লোক তার খেয়াল খুশি মত ব্লগ লিখতে পারেন, এবং এক একটা ব্লগ, এক একজন মানুষের সন্তন্ত্র চিন্তা, তার ব্যক্তিগত সার্ভমত্তের প্রতিক .... এতটুকুই | ব্লগের লেখা নিয়ে বিশ্বে কোথাউ এত তোলপার হয়েছি কিনা তা আমর অজানা, বা “ব্লগার” নামের "বিপ্লবী" এক শ্রেণী আছে কিনা , তাও সুনিশ্চিত করে বলতে পারছি না| তবে মূল বিষয়টা হচ্ছে এসব ব্লগ বাংলাদেশর জনগনের ০.৫% নাগরিক আদৌ পাঠ করেন কি না - তা আমার সন্দেহ !
৫. এখন আবির্ভাব ঘটলো আরেক "নব্য ব্রাহ্মন"দের দল ~~~ 'হেফাজতুল(জামাতি) ইসলাম' - এবং ঠিক ব্লগারদের ন্যায় - তাদের উত্থানও চোখে পড়ার মতো - ওদের কৌশল গুলো ব্লগারদের মতো - এক ও অভিন্ন | চিন্তার বিষয় হচ্ছে ব্লগারদের গ্রেফতার ও ফাসিতে তোলার দাবি জানিয়ে “পবিত্র হুজুরগণ” সময় বেধে দিয়েছেন ৬ই এপ্রিল ২০১৩ পর্যন্ত | যদি তাদের দাবি মানা না হয়, তবে মানিক মিয়া এভিনিউতে তারা “ইসলামী গণজাগরণ মঞ্চ” তৈরী করবে - এবং সারা বাংলাদেশ থেকে লোক জড়ো করে ঘেরাও দেবে ঢাকা | আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন সারা ঢাকা শহরে সেদিন সাদা তুপি দিয়ে সয়লাব হয়ে যাবে |লাখো ধর্ম ভীরু বাঙালি মুসলিমকে রাস্তায় নামাতে ওই ৩টা পয়েন্টই যথেষ্ট | কেনো এই কথা বলছি?
৬. আমাদের সৃতিশক্তি খুবই ক্ষিণ | ১৯৯৬ এ এই একই “মুক্তি যুদ্ধের পক্ষের শক্তির” তখন ক্ষমতায় বহাল ছিলো | তথাপি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হরতাল দিলো ইসলামী দলগুলো , এবং রাজপথ দখল করেই খ্যান্ত হননি, বরং বাড়তি গজারির লাঠি হাতে সারাদিন মহড়া চল্লো "আমরা সবাই তালিবান, বাংলা হবে আফগান" মুহুমুহু স্লোগানে | আমরা সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ সেদিন জানি কথায় হারিয়ে গিয়েছিলাম - নাকি কোনো পিকনিকে গিয়েছিলাম তা আমার এই মুহুর্তে মনে পরছে না :)
৭. ৬ই এপ্রিল একটা বিশাল মাপের রক্তক্ষয় হবার সম্ভাব্য দিন | উল্টোটা হতে পাড়ে - হেফাজতুল ইসলাম কে clean walkoverও মানিক মিয়া এভিনিউ দখল করার একটা green signal দিয়ে দিতে পাড়ে রাষ্ট্রের কেউ বা কাহারা | এরপর ঘটবে ভয়াবহ এক সাংস্কৃতিক বিপর্যয় | বাঙালির শত বছরের ঐতিজ্যবাহী চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উত্সব পন্ড হবার জোর সম্ভাবনা রয়েছে |আগাগোড়াই তো উনারা এগুলোকে “হিন্দু, মালাউন ও নাস্তিকদের” উত্সব বলে আসছেন |আমি আশা করছি আমার এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমানিত হোক | আশা করছি আমার ব্যক্তিগত ভয় fear psychosis আপনাদের উপর সংক্রামন করার চেষ্টা করছি এবং এর কারণে রাত জেগে এই দীর্ঘ boring লেখা | আশা করুন | আশা করতে কোনো টাকা খরচ হয় না | আশার সমষ্টিগত রূপ হলো আরাধনা, উপাসনা, প্রার্থনা - নিতান্তই বাংলা শব্দ - ঠিক যেমন দোওআ |
জয় বাংলা
জয় গুরু আলেক সাই /\
0 Comments:
Post a Comment
<< Home