মনকে ভীষণ গুরুত্ব দেন তিনি। বিশ্বাস করেন মনই মানুষের সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে। মন খারাপ হলে নিরব থাকেন। ধ্যানে থাকেন। রেগে যান, হতাশ হন কেউ মিথ্যা কথা বললে। পেছনের জীবন নিয়ে কখনও আফসোসে ভোগেন না। আগামীর দিকে তাঁর চোখ। তিনি মাকসুদুল হক। ব্যান্ড স্টার এই তারকার মুখোমুখি হয়েছেন ওমর শাহেদ। ছবি তুলেছেন মোহাম্মদ হানজালা
মখ : কেমন আছেন?
মাকসুদ : ভালো।
মখ : কেন ভালো আছেন?
মাকসুদ : সবসময় ভালো থাকি। এজন্য ভালো আছি।
মখ : ভালো থাকাটা জরুরী?
মাকসুদ : অবশ্যই।
মখ : কেন?
মাকসুদ : ভালো না থাকলে খারাপ এসে ঘাড়ের উপর চেপে বসে। তাই খারাপ সিচুয়েশনেও ভালো থাকতে হয়। সবকিছুর সঙ্গে মন জড়িত। মন দেহকে পরিচালনা করে এবং দেহ মনকে পরিচালিত করে। কে কাকে করে এটা সবসময় বিতর্কের বিষয়। কিন্তু আমার ধারণা, মনই সবকিছু। মনই তার জীবনের কথা বলে। মনটা যেন সুস্থ থাকে, সবল থাকে, ভালো থাকে এবং আনন্দে থাকে- তার কোন বিকল্প নেই।
মখ : ভালো থাকতে হলে কোন কোন বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হয়?
মাকসুদ : প্রথমতঃ নিজের সঙ্গে নিজের সততা- ‘ইউ হ্যাভ টু বি অনেষ্ট উইথ ইউরসেলফ’। পারিপার্শিক সমস্যা নেই, এমন কোন মানুষও পৃথিবীতে নেই। দুই ধরনের লোকের কোন সমস্যা নেই। একটা হলো শিশুর কোন সমস্যা নেই। আরেকটি হলো সম্পুর্ণ উন্মাদ লোকের কোন সমস্যা নেই। কিন্তু তারা বাদে সবারই সমস্যা আছে। সমস্যার ভেতরেই সমাধান আছে, সমস্যার বাইরে না। সবচেয়ে জরুরী হলো, সমস্যাকে চিহ্নিত করা এবং সেগুলোকে যুক্তি দিয়ে শেষ করা। সমস্যা হয়েছে, সেটাকে যুক্তি দিয়ে, নিজের ভালো বুদ্ধি দিয়ে পেরিয়ে আসা। সেখানেই মানুষের সার্থকতা। যারা সমস্যাকে ওভারকাম করতে পারে তারাই সাকসেসফুল হয়। এটা আমার একটা সিম্পল হিসেব।
মখ : সমস্যাকে কিভাবে সমাধান করতে হবে? আর এটা কেন জরুরী?
মাকসুদ : ওই যে আমি গান বলেছি, আগামী শুধু আসবে আজকের বেঁচে থাকায়। আগামী তো শেষ। আগামী যদি দেখা যেত, ঈশ্বর তাহলে আমাদের মাথার পেছনে দুটো চোখ দিতেন। উনি তো সেটা দেননি। প্রতিটি দিন কেন, প্রতিটি মুহুর্তে সবসময় ঈশ্বর আমাদের মধ্যে আশা দেন, আশার বাণী দেন। সেই আশার বাণীটা হলো আগামী। আগামীটার জন্য আমাদের সবসময় পজেটিভ থাকতে হবে। সবসময় ভালো থাকতে হবে। আগামী নির্ণয় করবে আমার ভবিষ্যতটা কী হবে? পেছনে যা ফেলে এসেছি, সেগুলোর জন্য বারে বারেই পেছনে পড়ে থাকার কোন অর্থ হয় না। প্রত্যেকটা মুহুর্তকে নতুন করে বোঝার আছে, প্রত্যেকটা মুহূর্ত ইম্পর্টেন্ট। সেই মুহূর্তগুলোকে কিভাবে নিজের কাজে লাগাতে পারি সেটাই হলো আমাদের কাজ। পেছনের ঘটনাগুলো হলো আমাদের অভিজ্ঞতা। পেছনের ঘটনাগুলো কি কারণে আমার জীবনে খারাপ হিসেবে এসেছিল? কি কারণে মনের অবস্থা খারাপ হয়েছিল? – সেগুলোর যদি সবসময় একটা সৎ বিশ্লেষণ করি, তাহলে ভবিষ্যতে সে ভুলগুলো আর করতে পারি না। একটি জিনিষ খুব স্পষ্ট- একজন মানুষ একটি ভুল একবারের জায়গায় যদি দুবার করে সেটা গ্রহনযোগ্য। কিন্তু তৃতীয়বার করাটা বোকামি, চতুর্থবার করলে বুঝতে হবে তার শোধরানোর ইচ্ছেই নেই। অর্থাৎ মানুষ যদি তার নিজের দোষগুলোকে স্বীকার না করে এবং সবসময় মনে করে, ‘আমিই রাইট’ তাহলে তো সমস্যা। সে ঐ সমস্যা থেকে বেরুতে পারবে না। এগুলো মানুষের ক্যারেক্টারে চলে আসে।
মখ : মন খারাপ হয় না?
মাকসুদ : অনেক হয়।
মখ : তখন কি করেন?
মাকসুদ : মন খারাপ হলে যে কাজটি করার সবচেয়ে বেশি চেষ্টা করি- যত নিরব থাকা যায়। একেবারে ধ্যানে থাকি। বসে ধ্যান করতে হবে এমন কোনো ষয় আছে বলে আমার মনে হয় না। যে অবস্থায় থাকি- কাজকর্মের ভেতরে, বাসায়, বইয়ের ভেতরে, একাকীত্বে মন খারাপকে হ্যান্ডেল করি। মন যখনখারাপ হয়, আমি খারাপ হতে দেই। কত আর তুমি খারাপ হবে মন? মন খারাপেরও শেষ আছে, মন ভালোরও শেষ আছে। মাঝামাঝি থাকারটাই হলো আনন্দ।
মখ : মন ভালো কিংবা খারাপ, দুঃখ-কষ্ট, রাগ-হিংসা- এগুলোকে কিভাবে দেখেন?
মাকসুদ : এগুলো আমাদের বেসিক স্বভাব-চরিত্রের ভেতরে অন্তর্ভুক্ত। তবে কত পার্সেন্ট সেটা নির্ণয় করতে হয়। খারাপ রোগ, শোক, দুঃখ এগুলো যদি আমাকে কাতর করে ফেলে তাহলে কিন্তু আমি ফাংশন করতে পারবো না। রেলওয়ের যেমন বগি হয়, তেমনি এগুলোকে আমি জীবনের বগিতে ফেলে রাখি। আচ্ছা রাগটা উঠেছে, কতক্ষণ রাগ থাকবে? খুব বেশি হলে ১০ মিনিটের বেশি রাগ করে থাকতে পারি না। দিনকে দিন একটি লোক যে রাগ করে থাকে, অভিমান করে থাকে- এটা আমার পক্ষে সম্ভব না। এগুলো ওভারকাম করতে চাই এবং করিও।
মখ : কি কারণে রেগে যান?
মাকসুদ : স্পেসিফিক কতগুলো কারণে। মিথ্যা সহ্য করতে পারি না। নিজেও মিথ্যা বলি না। কেউ যদি মিথ্যা বলে, তিলকে তাল করে, অসত্যকে সত্য বলে স্টাবলিস্ট করতে চায় এবং সেজন্য ইচ্ছে করে যুক্তি-তর্ক করে, সে রকম সিচুয়েশন মেনে নিতে পারি না। মানুষের অহংকার মানতে পারি না। কারণ নিজে অহংকারী নই। সুতরাং অহংকার যার ভেতরে বেশি, যার ভেতরে মিথ্যা বেশি; এই যুগটাই তো মিথ্যার উপরে চলছে; হয়তো বাসায় ঘুমিয়ে আছি। কিন্তু বলছি পথে আছি- এই মিথ্যাগুলো; মিথ্যা নিতে পারি না। মিথ্যা খুব হতাশ করে। হতাশ হলে রেগে যাই।
মখ : রাগ দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেন?
মাকসুদ : রাগ তো অবশ্যই দমিয়ে রাখতেই হবে। এটা অনগোয়িং প্রসেস। রাগ তো হবেই। ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি মানুষ ১৬ ঘন্টা জেগে থাকে, তার রাগ হবে না- এটা খুব অস্বাভাবিক। দিনে একবার না একবার রাগ হবে। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে রাগের মাত্রাটা কতটুকু? চিৎকার, চ্যাঁচামেচি করবো? হাত তুলবো? কাউকে গালি দিবো? না, অতটা রাগ করি না।
মখ : রাগ নিয়ন্ত্রণ দরকার?
মাকসুদ : খুবই বেশি।
মখ : কিভাবে দরকার? পরামর্শটা কি?
মাকসুদ : ব্যক্তিগতভাবে প্রণয়াণম, ইয়োগা করি। তাতে একধরণের শিথিল মেন্টালিটিতে আছি। ঘুমও কম হয়। এত বেশি এনার্জি, এত রিলাক্স থাকি যে, চারঘন্টা বা পাঁচঘন্টা ঘুমই যথেষ্ট। আমি মনে করি, আমারা এক্সারসাইজ করি, মাসল নিয়ে চিন্তা করি; দেহ নিয়ে চিন্তা করি, বডি ফিটনেস কেমন সেটা য়ে চিন্তা করি, একবারও চিন্তা করি না মানসিক স্বস্তি আছে কিনা। যোগ এখানে একটি ডিফরেন্ট ইমাজিনেশন; যোগ ব্যায়াম না; যোগ হলো যোগাযোগ। যোগ হলো বিয়োগের উল্টোটা। এই যে আপনি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে আছেন, এই যে কসমিক এনার্জির ভেতরে আছে, এই এনার্জির ভেতরে আপনাকে থাকতে হবে এবং সবকিছুর আপনি একটি অংশ- মাটি, বাতাস, প্রকৃতি। সে বারবার রিমাইন্ড দেবে এবং বারে বারে সে জায়গায় নিয়ে আসবে। যোগ শরীরের সব অঙ্গ ত্যঙ্গকে ব্যায়াম করায়। যেটা আমরা স্বভাবত করি না। শুধু মাসল নিয়ে ব্যস্ত থাকি, ফিগার নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আমাদের বুকের পাটা কত বড় সেটা হিসাব করতে থাকি। শাহরুখ খান হতে পারলাম না সালমান সেটা হিসাব করতে থাকি। কিন্তু যোগ সেটা না। যোগ অভ্যন্তরীণ এবং সবসময়কার।
মখ : কি কাজ করতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে?
মাকসুদ : আমি একটু ফিলসফিক্যাল। ধ্যানে থাকতে পছন্দ করি। একটা সুন্দর চিন্তা নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা থাকি। এটাই সবচেয়ে আনন্দের। সাধারণত সৃষ্টিশীল চিন্তা। সমগ্র মানুষের ভালো কি করে করা যায়- এ ধরনের চিন্তা খুব আনন্দ দেয়।
ছবিঃ মোহাম্মদ হানজালা
মখ : ভেতরে তো হিংসা আছে?
মাকসুদ : একেবারে নেই তা বলবো না। কিন্তু হিংসা সাধারণত করি না। যদি বলি হিংসা নেই, তাহলে তো আমি মানুষ না। মানুষের ভেতরে হিংসা থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পারসেন্টেজটা একেবারেই কম। ও করছে, তার থেকে ভালো কিভাবে করতে পারি, এই পজিটিভ চেষ্টাটা আমার আছে।
মখ : মানসিক ভাবে কখনো অসুস্থ হয়েছেন?
মাকসুদ : হয়েছি।
মখ : তখন কি করেছেন?
মাকসুদ : মানসিক ভাবে যখন অসুস্থ হয়েছি আমাকে একবার ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ফিয়ার সাইকোসিস যেটা বলে, সেটা হয়েছিল। প্রায় মাস দেড়েক ফাংশনাল ছিলাম না। এ দেশে সমস্যা হলো, মানুষ যখন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়, তখন তাকে পাগল বলা হয় এবং পাগল শব্দটা একটা সামাজিক অপরাধ। তবে আমি মনে করি, আইনস্টাইন থেকে শুরু করে বিশ্বের এমন কোনো বড় মানুষ নেই, যারা নতুন কিছু করতে গিয়েছেন, পাগল বলা হয়নি। আরো মনে রাখতে হবে, কোনো লোকই হান্ডেড পারসেন্ট মেন্টালি ফিট না। যে বলবে আমি মানসিক ভাবে ১০০ ভাগ সুস্থ সে আসলেই পাগল। ওই যে আমরা রাগ করলে বলি- তখন আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু সেটা যদি দিনে আট ঘন্টা বা দশ ঘন্টা বা তার চেয়েও বেশি থাকে, তার জন্য ট্রিটমেন্ট আছে এবং সে চিকিৎসা বাংলাদেশে এখন হাতের নাগালে।
মখ : স্বপ্ন দেখেন?
মাকসুদ : দেখি।
মখ : ঘুমের মধ্যে দেখেন নাকি স্বপ্ন তৈরি করেন?
মাকসুদ : ঘুমে দেখি। আর এমনি তো নিজের মনে একটা স্বপ্ন থাকে।
ওই যে আমি গান বলেছি, আগামী শুধু আসবে আজকের বেঁচে থাকায়। আগামী তো শেষ। আগামী যদি দেখা যেত, ঈশ্বর তাহলে আমাদের মাথার পেছনেদুটোচোখ দিতেন। উনি তো সেটা দেননি। প্রতিটি দিন কেন, প্রতিটি মুহুর্তে সবসময় ঈশ্বর আমাদের মধ্যে আশা দেন, আশার বাণী দেন। সেই আশার বাণীটা হলো আগামী। আগামীটার জন্য আমাদের সবসময় পজেটিভ থাকতে হবে। সবসময় ভালো থাকতে হবে। আগামী নির্ণয় করবে আমার ভবিষ্যতটা কী হবে? পেছনে যা ফেলে এসেছি, সেগুলোর জন্য বারে বারেই পেছনে পড়ে থাকার কোন অর্থ হয় না। প্রত্যেকটা মুহুর্তকে নতুন করে বোঝার আছে, প্রত্যেকটা মুহূর্ত ইম্পর্টেন্ট। সেই মুহূর্তগুলোকে কিভাবে নিজের কাজে লাগাতে পারি সেটাই হলো আমাদের কাজ।
মখ : ঘুমে কি ধরনের স্বপ্ন দেখেন?
মাকসুদ : স্পেসিফিক্যালি বলা ডিফিক্যাল্ট। খুব পজেটিভ স্বপ্ন দেখেছি। ভয় পাওয়া বা হতাশ হওয়ার মতো স্বপ্ন দেখিনি। মৃত লোকদের দেখি। বাবাকে দেখি,চাচাকে দেখি। মরহুমা স্ত্রীকেও দেখি। মৃত লোককে দেখি। বাট নট রেগুলার। স্বপ্নে কোন ম্যাসেজ দেওয়া হলে সেটি রাখার চেষ্টা করি। ব্যাপারটির একটিউদাহরণ দেই- আমার চুল লম্বা ছিল। গোঁফ ছিল। ১৯৮৭ সালে বাবা মারা গেলেন। ‘৯২তে তাঁকে স্বপ্ন দেখলাম। রসিকতা করে বললেন, ‘তুই মোচটা কেটে ফেল। আর নয়। আর মোচ রাখিস না।’ উনি মোচ রাখতেন না। এই আমি তখন থেকে ক্লিন সেভ। এটা ভালো না মন্দ জানি না। তবে বাবার কথা রাখলাম।
মখ : নিজে ভালো থাকার জন্য অনেক কিছু করি। কিন্তু অন্যরা যাতে আপনাকে ভালোবাসে, ভালো বলে, তাদের ভালো লাগে- সেজন্য কতটা সচেতন?মাকসুদ : আমি মানুষটা চেষ্টা করি সবার সঙ্গে ভালো থাকার। এটা আমার ক্যারেক্টার। আমি সবার কাছে হেল্পফুল, মানুষকে সময় দেই। এক্সেস দেই। আলাদা করে ভালো থাকতে হবে, সে চেষ্টা করি না। আমি যা সেটা যদি কেউ মেনে নেয়, ওয়েল এন্ড গুড। অনেকে হয়তো নাও মানতে পারে। হয়তো মুখের উপর বলে দেওয়াটা নাও মানাতে পারে। তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি আমার বেসিক ক্যারেক্টার তো চেঞ্জ করতে পারবো না। এটা নিয়েই আমার জন্ম।
মখ : কাউকে প্রবলভাবে ভালোবাসেন?
মাকসুদ : ভালোবাসতে তো হবেই। তার উপরে আমি শিল্পী। আমার ভালোবাসার পরিধিটা বিশাল।
মখ : আপনার প্রফেশনে আপনিতো একজন সফল মানুষ। আপনি কি মনে করেন অন্য প্রফেশনেও আপনি সফল হতে পারতেন?
মাকসুদ : সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে কখনো খুব একটা চিন্তা করি না। আমি কাজের মানুষ, শুধু কাজ করি। যত রকম কাজের সুযোগ পাই, করি।সিনসিয়ারলি করি। এটা নিয়ে আমার একটা সুনাম আছে যে, মাকসুদ ভাইকে যদি কোন কাজ দেওয়া হয়, তিনি সেটা মনোযোগ দিয়ে, ভালোভাবে করেন। এই সিনসিয়ারিটির যদি দাম দেয় তাহলে ভালো। আর না দিলেও আমার কিছু আসে যায় না। সফল না বিফল এটা নিয়ে কখনো ভাবি না।
মখ : নিজের কাছে মানুষ হিসেবে কেমন?
মাকসুদ : খুব একটা ভালো মানুষ না (হাসি)। ভালো মানুষ বা সাকসেসফুল মানুষের সংজ্ঞা যদি হয় টাকা, প্রভাব, প্রতিপত্তি; সে সংজ্ঞায় মোটেও পড়ি না।সুতরাং আমাদের সমাজ ভালো মানুষের যে সংজ্ঞাটা দেয়, সে সংজ্ঞার ভেতরে আমি পড়ি না। চেষ্টা করি সবার সঙ্গে ভালো থাকার। বিশেষ করে একেবারে নিকট আত্মীয়-স্বজন, বউ-বাচ্চা, বন্ধু বান্ধব। যারা সংস্পর্শে আসে চেষ্টা করি টু মেক দেম ফিল ইমপরটেন্ট। কাউকে ছোট চোখে দেখি না। সে একটা বাউল হোক, সে গরীব মানুষ হোক। সবাইকে সম্মান দেই। এতে যদি আমি ভালো মানুষ তো ভালো মানুষ, জানি না। তবে মানুষের ভালোবাসা অনেক পাই। এতে কোন সন্দেহ নেই।
মখ : যে কোন সফলতার পেছনে মানসিক সুস্থ্যতা বা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনার জীবনে এটার প্রভাব কতটুকু? ভয়ংকর উত্থান পতনের ভেতর দিয়ে আপনি গিয়েছেন।
মাকসুদ : একটা মাত্র জীবন। প্রত্যেকটা মুহূর্ত শিক্ষণীয়। মানসিকভাবে যখন অসুস্থ থেকেছি, দুই বছর, তিন বছর- যাই হোক না কেন, কম আর বেশি; এখান থেকে তো শিক্ষা পেয়েছি। সেটাই কাজে লাগিয়েছি। একেবারে আকাশ পর্যন্ত উঠেছি, মাটিতেও পড়েছি। একবার না, এটা সবাই জানেন, অনেকবার। এই উত্থান-পতনের ভেতরেও মানুষের একটি ডিগনিটি আছে, সেলফ রেসপেক্ট আছে। মানুষ জানে, আমি আমার সেলফ রেসপেক্ট কখনো হারাইনি। এই বেসিক ক্যারেক্টারটি চেঞ্জ করিনি।
মখ : জীবনের শেষ প্রান্তে নিজকে কোথায় দেখতে চান বা জীবন যখন শুরু করেছিলেন কখনো কি ভেবেছিলেন একদিন মাকসুদ হয়ে উঠবেন?
মাকসুদ : একটি স্বপ্ন ছিল। জানতাম একটি জায়গায় যেতে পারবো। আমি সত্যিই জানতাম। যেটার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া মুশকিল। কিন্তু কোনজায়গায় যাব সেটা জানতাম এবং সেজন্যই কিন্তু আমি কাজগুলো করেছি। এখনো সেই আমার মধ্যে আছে। যে জেনেছি এবং নিজেকে নিয়ে যা ভেবেছি তার অধিকাংশই পেয়েছি। সবাই পেতে চায়। কিন্তু আমার তো দেবার অনেক আছে। যেটা দেবার আছে সমাজ, আমার দেশ, আমাদের মানুষ তা নিতে পারেনি। তার ১০ ভাগও সমাজ নিতে পারেনি। আমার দুঃখ শুধু ওই জায়গায়। বামবা থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে কখনোই ব্যক্তি মাকসুদের কথা চিন্তা করিনি। সবসময় সমষ্টির কথা ভেবেছি। ব্যান্ডসঙ্গীতে, সামাজিক ক্ষেত্রে, বাউলদের ক্ষেত্রে, লেখালেখির ক্ষেত্রে, কবিতার ক্ষেত্রে; আমার কোন লেখাই কিন্তু আমার কেন্দ্রিক না। আমি মাকসুদুল হক, আমাকে ১০ জন চেনে দ্যাটস গুড এনাফ। আমি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য পাত্র না এবং আমার অফুরন্ত ভান্ডার আছে, তার ১০ পার্সেন্টও আমি দিতে পারিনি। আমার আর পাওয়ার কিছু নেই। আমার দেবার ইচ্ছে, দিতে চাই। কোথায় যাব জানি না, তবে দিতে দিতেই বিলীন হয়ে যাব।
মানসিক ভাবে যখন অসুস্থ হয়েছি আমাকে একবার ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ফিয়ার সাইকোসিস যেটা বলে, সেটা হয়েছিল। প্রায় মাস দেড়েক ফাংশনাল ছিলাম না। এ দেশে সমস্যা হলো, মানুষ যখন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়, তখন তাকে পাগল বলা হয় এবং পাগল শব্দটা একটা সামাজিক অপরাধ। তবে আমি মনে করি, আইনস্টাইন থেকে শুরু করে বিশ্বের এমন কোনো বড় মানুষ নেই, যারা নতুন কিছু করতে গিয়েছেন, পাগল বলা হয়নি। আরো মনে রাখতে হবে, কোনো লোকই হান্ডেড পারসেন্ট মেন্টালি ফিট না। যে বলবে আমি মানসিক ভাবে ১০০ ভাগ সুস্থ সে আসলেই পাগল।