Thursday, January 21, 2016

মিস্টার চ্যাটার্জির মদের দোকান



মাকুসুদুল হক 

কলকাতার ধরমতলায়  মিস্টার চ্যাটার্জি মদের দোকান| প্রতিদিনের রুটিন মোটামুটি একিরকম | চ্যাটার্জি  দোকান বন্ধ করে রাত ৯টায় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন | ঘন্টা খানিক লাগে বাড়ি পৌছাতে | রাত ১১:৩০টার আগেই ডিনার শেষ করে ১২টা নাগাদ ঘুমিয়ে পরেন  | আবার ভোর ৬টাই ঘুম থেকে উঠেই সকাল ৮:৩০ দোকানে পৌছে ১০ টা সময়  দোকান খুলে বসেন - আবার শুরু হয় তার মদের ব্যবসা |

রেগুলার কাস্টমার মিস্টার ব্যানার্জি  কম বেশি প্রতিদিনই  চ্যাটার্জির  দোকান থেকে মদ কিনে নিয়ে যান | খুবই কম কথা বলেন | কখনই মদ বাকিতে কেনেন না - সেরকম রিকোয়েস্টও কোনদিন করেননি | মাতাল অবস্থায় তাকে কখনো দেখা যায় না | মাঝে মধ্যে চ্যাটার্জির সাথে হাই হ্যালো গুড মর্নিং বা গুড ইভনিং হলেও দীর্ঘ কথাবার্তা বা আড্ডা দুজনের কখনো হয়না | স্ত্রেইত ফরওয়ার্ড কাস্টমার-সেলার রিলেশনশিপ |
তবে সেই রাতটা  ছিল একটু ব্যতিক্রম | চ্যাটার্জি ঘুমোতে যাবেন - ঠিক তখনি সেই পুরনো আমলের ঝাক্কাস সাইজএর টেলিফোন (আজকের 'ল্যান্ড ফোন') ক্রিং ক্রিং ক্রিং বেজেই চললো | খানিকটা বিরক্ত হয়েই চ্যাটার্জি ফোন ধরলেন |ও পাশের কন্ঠটা পরিচিত মনে হচ্ছিলো

'হ্যালো চ্যাটার্জি বলছ  ?'

'ইয়েস - কে বলছেন?'

'চ্যাটার্জি আমি ব্যানার্জি '

'আরে দাদা - একি সৌভাগ্য - এ রাতে আমাকে মনে পড়লো যে ?.....' এরই মধ্যে ২-৩ মিনিট এটা সেটা খোশ গপ্প চললো - 'আসলে দুজনই এত ব্যস্ত থাকি - সেরকম কথায় হয় না'..ইত্যাদি ইত্যাদি ..তার  পর

'চ্যাটার্জী এবার মূল প্রসঙ্গে আশি - আচ্ছা আগামীকাল কটাই তোমার মদের দোকানটা খুলছে বলোতো?'

'দাদা টেন এ এম - সকাল দশটা'

'ও কে  থ্যান্ক ইউ সো মাছ চ্যাটার্জী - এই রাতে তোমাকে বদার করার জন্য খুবই দুক্ষিত - গুড নাইট'... বলে ব্যানার্জি টেলিফোন রেখে দিল

'এত রাতেকে ফোন কে দিয়েছিল গো?' - জানতে ছেলেন মিসেস চ্যাটার্জী

'আমার একজন রেগুলার কাস্টমার - মিস্টার ব্যানার্জি - খুবই অমায়িক ভদ্রলোক'

'এটা কি বলো? অমায়িক ভদ্রলোক এই রাতে কি কল করে? '

'না..উনি আসলেই খুব ভালো মানুষ - সকালে কটাই  দোকান খুলবে জানতে চেল - মনে হয় দুপুরে উনার কোনো পার্টি ফার্টি আছে - মদ লাগবে'  

'শেষ রাতে কোনো ভদ্রলোক ফোন করে না বুঝলে - করে মাতালরা ......ভদ্রলোক ....হুহঃ'

একই ছাদের নিচে বহু বছর বাস করলেও, একই খাটে ঘুমালেও মি আর মিসেস চ্যাটার্জির কেমন জানি একটা দুরত্ব | খুব কমই দুজন 'কাছাকাছি' ঘুমান |
'বিক্ষিপ্ত ঘটনা' ছাড়া দুজন কখনো একে অপরের চোখেও তাকান না |

তবে সেরাতে মিসেস চ্যাটার্জী যে কোনো কারণেই হোক মি চ্যাটার্জি কে 'অচমকা হামলা' করে বসলো|অনুমানিক রাত ১টায় … দুজনার 'কুস্তি' শুরু হবার প্রারম্ভে কিছু 'প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি' চলছে ... আর  ঠিক তখনি..... আবার সজোরে সেই বেহায়া টেলিফোন শুরু হলো  ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং.....

'হ্যালো চ্যাটার্জি আমি ব্যানার্জি  বলছি - সরি টু  বদার ইউ এগেইন ....আচ্ছা আগামীকাল সকাল কটাই জানি তোমার  মদের দোকান খুলবে বললা ?'

এ যাত্রা চ্যাটার্জী একটু বিরক্ত সরেই বললনে 'সকাল ১০টা.... টেন এ আম দাদা -  মদ ফদ যা লগে চলে এসেন এবং নিয়ে যেয়েন - ও কে?'

'ও কে থানক ইউ এগেইন' বলে ব্যানার্জি ফোন রেখে দিলেন

সে রাতের মিস্টার আর মিসেস চ্যাতের্জ্র 'মধুময় কুস্তি' আর হলো না | বিরক্ত হয়ে পাশ ফিরে মিসেস চ্যাটার্জি ঘুমিয়ে পড়লেন ...মিস্টার চ্যাটার্জি এপাশ ওপাশ কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করে নাক ডাকা শুরু করলেন |

তখন ভোর ৪টা....  ওই একই  ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং ...বেজেই চললো... মিস্টার চ্যাটার্জি ফোন ধরেই বুঝলেন আবারও 'সেই ব্যানার্জি বেটা'...

'চ্যাটার্জি তোমাকে আবার একটু বিরক্ত করছি - আচ্ছা তোমার মদের দোকানটা তো সকাল ১০ টায় খুলবে, এবার বলো তো....... বন্ধ হবে কটাই?"    
 চ্যাটার্জি আর ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারল না - শুরু করলো খিস্তি


'আচ্ছা মশাই আপনাকে তো আমি একজন ভদ্রলোক মনে করতাম - আজ আপনি এ কি শুরু করলেন বলুন তো? এই রাত বিরাতে একই প্রশ্ন কটাই দোকান খুলবে কটাই দোকান বন্ধ হবে করেই যাচ্ছেন - আপনার কি কোনো কান্ডজ্ঞান নেই, যে এ সময় মানুষ ঘুমায়..আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন....?'

'এই চ্যাটার্জি প্লিজ তুমি আমাকে ভুল বুঝছ,... রাগ কর না প্লিজ..আমার কথা একটু শোনো'

'কি আর নতুন কথা শুনাবেন মশাই - একই বাজে কথা বকে যাচ্ছেন আর বকে যাচ্ছেন....'

'প্লিজ একটু থাম..শান্ত হও'

চ্যাটার্জি মাথা এতটা গরম যে সেই আর কোনো মতেই  থামছে না...৫ থেকে ৭ মিনিট অবিরাম খিস্তি চললো…..তারপর একটু হাফিয়ে উঠে শান্ত হলেন

এ সুযোগটাই নিলেন ব্যানার্জি

'শোনো চ্যাটার্জি….. তুমি আমাকে খামোখা ভুল বুঝছ ...বিষয়টা হলো...গতকাল রাতে তুমি যখন তোমার মদের দোকানটা বন্ধ করেছিলে ...আমি তোমার দোকানের ভেতরেই ছিলাম......এবং সেখান  থেকে বসেই  আমি মদ খাচ্ছি.....আর তোমাকে ফোন দিচ্ছি’  
   


0 Comments:

Post a Comment

<< Home